চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা - চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে না জেনে থাকলে আজকের আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে নিন। বর্তমান সময়ে সুপার ফুড "চিয়া সিড" সকলের নিকটই অতি পরিচিত একটি নাম। আজকের আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম তুলে ধরবো। সুতরাং পোস্টটি পড়লে আপনারা উপকৃত হবেন।
চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা - চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই খাবারের পুষ্টিগুণের ব্যাপারে অনেক সচেতন। তারই অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের খাদ্য তালিকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে চিয়া সীড। আপনাদের সুবিধার্থে এই আর্টিকেলে আমরা জানব চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহ কি কি, সেই সাথে ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম কানুন বিস্তারিত উল্লেখ করব। সুতরাং চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সুস্পষ্টভাবে জেনে নেওয়ার জন্য মনোযোগ দিয়ে আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন। 

পোস্ট সূচিপত্র - চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা - চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

চিয়া সিড কি?

চিয়া সিড বলতে মরুভূমি অঞ্চলে জন্ম নেয়া সালভিয়া উদ্ভিদের বীজকে বোঝানো হয়। মধ্য আমেরিকার বেশ কিছু অঞ্চলে চিয়া সিড অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়। স্বাভাবিকভাবে এটি শস্য বলে মনে হলেও এটি আসলে ভেষজ জাতীয়। প্রাচীন কালে অ্যাজটেক জাতির লোকজন প্রধান খাবার হিসাবে চিয়া সীড খেতো বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। বর্তমানে সুপার ফুড হিসেবে চেয়েছি আমাদের দেশে পরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশে চিয়া সিড উৎপন্ন হয় না বলে, বাহির থেকে তো আমদানি করতে হয়।

চিয়া সিড এর বাংলা নাম চিয়া বীজ নামে পরিচিত। অনেক চিয়া বীজকে কে তোকমা ভেবে ভুল করে থাকেন। আসলে চিয়া বীজ ও তোকমা আলাদা দুটি জিনিস। চিয়া সিড ও তোকমা এক জায়গায় রাখলেই তা আপনারা বুঝতে পারবেন। সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবেনা। চিয়া সিড খেলে কি হয় সে বিষয়টি আজকের এই পোস্টে আমরা সুস্পষ্ট ভাবে আলোচনা করব। তাই চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পূর্ণভাবে জেনে নেওয়ার জন্য পোস্টটি পুরোটা পড়ুন।

চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ

চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নেওয়ার পূর্বে চিয়া সিডের ভেতরে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে, সে সম্পর্কে ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। পৃথিবীর অন্যতম পুষ্টিকর খাবার হিসেবে চিয়া সিড বেশ প্রসিদ্ধ। বীজ জাতীয় প্রতিটি খাবারই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। চিয়া সিড বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানে ভরপুর যেমন: ওমেগা-৩-ফ্যাটি এসিড, ফাইবার, অ্যান্টি এক্সিডেন্ট, ভিটামিন, খনিজ ইত্যাদি। নিম্নে ১০০ গ্রাম চিয়া সিডের অভ্যন্তরে কি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান থাকে তা উল্লেখ করা হলোঃ 

আরও পড়ুন: গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - গাজর খেলে কি হয় শরীরে

  • ৪৮৬ কিলো ক্যালরি 
  • চর্বি ৩০ গ্রাম 
  • কার্বোহাইড্রেট ৪৩ গ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম ৩৩৫ মিঃগ্রা
  • জিংক ৪.৬ মিলিগ্রাম 
  • ফাইবার ৩৫ গ্রাম 
  • পটাশিয়াম ৪০৭ মিলিগ্রাম 
  • প্রোটিন ১৬.৫ গ্রাম 
  • ক্যালসিয়াম ৬৩১ মিলিগ্রাম 
  • ফসফরাস ৪৮০ মিলিগ্রাম 
  • ভিটামিন বি১ ০.৬৪ মিঃগ্রা
  • ভিটামিন বি৩ ৮.৯ মিঃগ্রা
  • আয়রন ৭.৭ মিলিগ্রাম 

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম - চিয়া সিড খাওয়ার সময় 

বেশিরভাগ মানুষ ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম জানার জন্য আগ্রহী থাকেন। আসলে চিয়া সিড স্বাদ গন্ধ বিহীন এক ধরনের দানাদার খাবার। সে জন্য চিয়া সিড রান্না করে খাওয়ার দরকার পড়ে না। আপনাদের উদ্দেশ্যে বলে রাখা ভালো সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা সবচেয়ে বেশি। সেজন্য একটি পাত্রে কুসুম গরম পানির ভেতরে চিয়া সিড ভিজিয়ে রাখুন। চিয়া সিড কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হয় এ ব্যাপারটি অনেকে জানেন না। ২০ থেকে ৩০ মিনিট আপনারা চিয়া সিড ভিজিয়ে রাখতে পারেন।

সকালে খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমানোর পূর্বে এই ভেজানো চিয়া সিড পানিসহ খেয়ে নিন। এছাড়াও আপনার পছন্দের ফলের জুসের সাথে চিয়া সিড মিশিয়ে একই নিয়মে খেতে পারেন। আবার টক দই, শসা, চিয়া সিড প্রভৃতি মিশ্রিত করে পাউরুটির সাথে মিশিয়ে সুপারফুড হিসেবে খেতে পারেন। এছাড়াও পুডিং, স্মুথি, স্যুপ ইত্যাদির সাথে চিয়া সিড মিশিয়ে নাস্তা হিসেবে খাওয়া যায়। আশা করি চিয়া সিড কিভাবে খায় তা বুঝে গেছেন। চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহ জানার জন্য এই পোস্টের পরবর্তী অংশ পড়ে নিন।

চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা সমূহ

চিয়া সিড খাওয়ার পরিমাণ ঠিক রেখে চিয়া সিড খেলে স্বাস্থ্যগতভাবে অনেক উপকার পাওয়া যায়। অনেকে কেবলমাত্র ওজন কমানোর জন্য চিয়া সিড খেয়ে থাকেন। এবার চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা এর মধ্য থেকে উপকারী যাবতীয় দিকগুলো তুলে ধরব।

আরও পড়ুন: গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম - গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়া যাবে কি

  • ওজন নিয়ন্ত্রণ: সকলের একটি কমন জিজ্ঞাসা চিয়া সিড কি ওজন কমায়! হ্যাঁ বন্ধুরা নিয়মিত চিয়া সিড খেলে সেটি আপনার দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে দারুণ ভূমিকা রাখবে। চিয়া সিডে আছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ফাইবার যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 
  • হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়: চিয়া সিডের অভ্যন্তরে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা ট্রাইগ্লিসারাইড ও রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর যত কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে, ততই আমাদের হৃদপিণ্ড সুস্থ ও সবল থাকবে। তাই হৃদপিন্ডের কার্যকারিতা বাড়াতে আপনি নিয়মিত চিয়া সিড খেতে পারেন।
  • হাড়ের গঠন সুগঠিত করতে: দেহের হাড়গুলো সুস্থ ও মজবুত রাখার জন্য ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খাওয়ার বিকল্প নেই। আপনার ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে চিয়া সিড হতে পারে আদর্শ খাবার। চিয়া সিডে থাকা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রণ আমাদের হাড়কে সুগঠিত করে এবং হাড়ের সুরক্ষা বৃদ্ধি করে শক্তিশালী করে তোলে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস এক আতঙ্কের নাম। রক্তে সুগারের আধিক্য বেড়ে গেলে চিয়া সিড সেটি নিমিষেই কমিয়ে ফেলতে পারে। রক্তের ভেতর ইনসুলিনের সম্প্রসারণ বাড়িয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আমাকে ভূমিকা রাখে এই চিয়া সীড।
  • চুলের যত্নে: চুলের রুক্ষতা কাটিয়ে চুল পড়া রোধ ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করার জন্য চিয়া সিডে থাকা প্রোটিন গুলো অত্যন্ত কার্যকরী। এছাড়াও চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড অত্যন্ত কার্যকর একটি উপাদান।
  • রক্তস্বল্পতা দূর করা: যে সকল ব্যক্তি রক্তস্বল্পতায় ভুগে থাকেন তাদের জন্য অত্যন্ত উপাদেয় খাবার এই চিয়া সিড। কারণ চিয়া সিডের ভেতরে রয়েছে রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধের মূল উপাদান আয়রন। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য এই আয়রণ ভূমিকা রাখে। 
  • ত্বক ও পেশির জন্য: শরীরে পেশির কোষ পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করার জন্য চিয়া সিডে থাকা প্রোটিন গুলো দারুন কাজে দেয়। শরীরের আদ্রতা বজায় রেখে, ত্বকের বলিরেখা দূর করা ও ত্বককে প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয় করার জন্য নিয়মিত চিয়া সিড খাওয়ার বিকল্প নাই।
  • কিডনি রোগ প্রতিরোধে: চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা ভাল এবার তা আপনাদের জানাবো। কিডনির কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি ও কিডনির স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য চিয়া সিডে থাকা উপাদান গুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। 
  • বাচ্চাদের বিকাশে: বাচ্চাদের জন্য চিয়া সিড এর উপকারিতা রয়েছে প্রচুর। চিয়া সিডে  থাকা ভিটামিন, মিনারেল, ওমেগা-৩-ফ্যাটি এসিড বাচ্চাদের মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ও বিকাশে দারুন অবদান রাখে। ছোট বাচ্চাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে তাদেরকে চিয়া সিড খাওয়ানো যেতে পারে।
সুতরাং পোস্টের এই অংশ থেকে আপনারা চিয়াসিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্বন্ধে বিস্তার ধারণা লাভ করলেন। চিয়াসিড খাওয়ার নিয়ম ও সময় যদি না জেনে থাকেন তবে পোস্টের প্রথম দিকের অংশ আবারও পড়ে নিন।

গর্ভাবস্থার চিয়া সিড খাওয়া যাবে কি - গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খেলে কি হয় এটিও জেনে রাখা জরুরী। গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী নারীদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার জন্য সকালে অথবা রাতে চিয়া বীজ খাওয়া যেতে পারে। এটি একদিকে গর্ভবতী মায়ের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে এবং গর্ভের শিশুর বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে। গর্ভাবস্থার চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম হলো, আপনি গরম দুধের সাথে কিছুটা চিয়া বীজ মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে করে চিয়া সিড এর কার্যকারিতা বহুগুনে বেড়ে যাবে। অনেকে জিজ্ঞাসা করেন চিয়া সিড কি রাতে খাওয়া যায়? হ্যাঁ চিয়া সিড অনায়াসে রাতে খেতে পারবেন এতে কোন সমস্যা নেই। 

চিয়া সিড এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া - চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা

চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্বন্ধে আপনারা ইতোমধ্যে অনেকটাই ধারণা লাভ করেছেন। চিয়া সিড আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতিতে কি ধরনের ভূমিকা রাখে তা নিশ্চয়ই আর অজানা নয়। এবার চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা কি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নিয়ে ফেলুন।

আরও পড়ুন: টমেটো খাওয়ার ২০টি উপকারিতা - টমেটো খাওয়ার নিয়ম ও অপকারিতা

  • যেহেতু চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে তাই অধিক পরিমাণে চিয়া সিড খেলে পেট ফাঁপা, বদ হজম ডায়রিয়া, পেট ফুলে যাওয়া, গ্যাস হওয়া প্রভৃতি পেটের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। 
  • চিয়া সিড রক্তে শর্করার মাত্রা দারুন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় রক্ত চাপের মাত্রা এতটাই কমিয়ে ফেলে যে তা দেহের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। 
  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিয়া সিড ক্যান্সারের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। তাই অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত ও ভালো মানের চিয়া সিড এর সন্ধান না পেলে চিয়া সিড খাওয়া উচিত নয়।
  • অনেকের এলার্জি সৃষ্টি করার জন্য দায়ী হতে পারে চিয়া সিড। তাই এলার্জির সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিয়া সিড এড়িয়ে চলাই ভালো। 

উপসংহার - চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা 

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আজকের পোস্টটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকলে নিশ্চয়ই চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা অর্জন করতে পেরেছেন। তাই স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য প্রতিদিনের খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত চিয়া সিড খেতে পারেন। বিভিন্ন অনলাইন শপ থেকে ভালো মানের চিয়া সিড ক্রয় করতে পারবেন। সর্বোপরি চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম অন্যদের জানাতে এখনই এই পোস্টটি শেয়ার করে আমাদের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
এই পোস্টে কমেন্ট করতে এখানে ক্লিক করুন

অনির্বাণ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url