টমেটো খাওয়ার ২০টি উপকারিতা - টমেটো খাওয়ার নিয়ম ও অপকারিতা
পোস্ট সূচিপত্র - টমেটো খাওয়ার ২০টি উপকারিতা - টমেটো খাওয়ার নিয়ম
- টমেটোর পুষ্টিগুণ ও উপাদান
- টমেটো খাওয়ার নিয়ম ও সঠিক সময়
- টমেটো খাওয়ার উপকারিতা বিস্তারিত (কাঁচা ও পাকা)
- প্রতিদিন কতটুকু টমেটো খাওয়া উচিত
- টমেটো খেলে কি ওজন কমে
- গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
- টমেটো খাওয়ার অপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক
- শেষ বক্তব্য
টমেটোর পুষ্টিগুণ - টমেটোর পুষ্টি উপাদান
টমেটো খাওয়ার উপকারিতা সমূহ জেনে নেওয়ার পূর্বে টমেটোর পুষ্টি উপাদান গুলো কি কি অর্থাৎ টমেটোর ভেতরে কি কি দরকারী খাদ্য উপাদান বিদ্যমান রয়েছে সে সম্পর্কে জেনে রাখাটা জরুরি। প্রতি ১০০ গ্রাম টমেটোতে কি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে, এবার চলুন তা জেনে নেওয়া যাক।
- ভিটামিন সি ২৭ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম ৪৮ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস ২০ মিলিগ্রাম
- লৌহ ০. ৪০ মিলিগ্রাম
- রিবোফ্লাভিন ০.৬ মিলিগ্রাম
- ক্যারোটিন ৩৫১ মাইক্রোগ্রাম
- থায়ামিন ০.১৩ মিলিগ্রাম
- পানি ৮৫%
- দ্রবণীয় প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট
- খনিজ লবণ
সুতরা টমেটোকে মৌসুমী ফসল কিংবা শীতকালীন সবজি যাই বলা হোক না কেন এটির পুষ্টির উপাদান নিয়ে পুষ্টিবিদদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। কারণ টমেটোর ভেতরে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান গুলো আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ফলপ্রসু ভূমিকা পালন করে। পোষ্টের পরবর্তী অংশে আপনারা টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও টমেটোর পুষ্টিগুণ সম্বন্ধে আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন।
টমেটো খাওয়ার নিয়ম - টমেটো খাওয়ার সঠিক সময়
টমেটো খাওয়ার উপকারিতা এত বেশি যে পুষ্টিবিদরা নিয়মিত ভাবে টমেটো খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে অনেকেই টমেটো খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অবহিত নয়। যদিও টমেটো খাওয়ার সুনির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই তবে কিছু পদ্ধতিতে টমেটো খেলে আপনি সেখান থেকে সর্বোচ্চ পুষ্টি লাভ করে উপকৃত হতে পারবেন। চলুন টমেটো খাওয়ার নিয়ম ও সময় সম্পর্কে এবার জানি।
- কাঁচা টমেটো খাওয়ার নিয়ম হলো আপনি সেটিতে লবণ যোগ করে খেতে পারেন। লবন দেওয়ার সুবিধা এই যে লবণ দ্রুততর সময়ে টমেটোতে থাকা লাইকোপিন শোষণে সাহায্য করে।
- চাইলে তরকারির ভেতর সবজি হিসেবে টমেটো খেতে পারেন। এ সময় তরকারিতে বেশি পানি ব্যবহার করবেন না, কারণ বেশি পানি ব্যবহার করলে টমেটোর পুষ্টি গুণাগুণ নষ্ট হয়।
- টমেটোর জুস বানিয়ে খেতে পারেন। অনলাইনে ঘাটাঘাটি করলে আপনারা টমেটোর জুস বানানোর বেশ কিছু রেসিপি পেয়ে যাবেন। টমেটোর জুস বানানোর সময় অবশ্যই টমেটোর বিচি গুলো ফেলে দেবেন না। কেননা টমেটোর বিচিতে অনেক উপকারী উপাদান রয়েছে।
- খাবারে বাড়তি সাহায্য করার জন্য টমেটোর সস বেশ লোভনীয় একটি খাবার। টমেটোর সস অন্যান্য সবজির সাথে মিশিয়ে খেলে তা থেকে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি শরীর অনেক পুষ্টি পাবে।
টমেটো খাওয়ার উপকারিতা বিস্তারিত
বন্ধুরে ইতোমধ্যে আপনারা টমেটো খাওয়ার সঠিক সময় এবং নিয়ম সম্পর্কে ধারনা পেয়েছেন। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে টমেটো খাওয়ার কি কি উপকারি দিক রয়েছে এবার সে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরছি।
কাঁচা টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
প্রথমত পাকা টমেটো খাওয়ার উপকারিতা আলোচনা পূর্বে কাচা টমেটো খেলে কি হয় সে বিষয়টি আপনাদের জানাবো। তবে চলুন কাঁচা টমেটোর উপকারিতা সমূহ এক নজরে জেনে ফেলি।
- এটি আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে অবদান রাখে।
- হার্ট কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
- অনাকাঙ্ক্ষিত রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে।
- শরীর গঠনের জন্য দরকারি পুষ্টি নিশ্চিত করে।
- মুখমণ্ডলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে বয়সের ছাপ দূর করে।
- চর্ম রোগের বিরুদ্ধে প্রহরীর ন্যায় কাজ করে থাকে।
- শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশে দারুণ অবদান রাখে।
- রূপচর্চায় ফেসপ্যাক হিসেবে কাঁচা টমেটো ব্যবহার করা হয়।
পাকা টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
টসটসে পাকা টমেটো খেতে কে না পছন্দ করে। মৌসুমী সবজি হিসাবে পাকা টমেটোর দামও একটু বাড়তি হয়ে থাকে।পাকা টমেটো খেলে আপনার স্বাস্থ্যের কি কি উন্নতি ঘটবে চলুন তা এবারে জেনে ফেলি।
- টমেটোর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গুণ হলো এটি আমাদের ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। যারা চুল পড়ে যাওয়া সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত টমেটো খেতে পারেন। টমেটো আমাদের চোখ ভালো রেখে দৃষ্টিশক্তি আরও বৃদ্ধি করে।
- টমেটো আর্থাইটিস ও হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা প্রতিরোধে প্রাকৃতিক প্রতিষেধকের মতো কাজ করে। যারা দীর্ঘদিন যাবত হাড়ের ব্যথায় ভুগছেন, তাদের জন্য টমেটো খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। ব্যাথা প্রতিরোধী গুণের কারণে ডাক্তাররা টমেটোকে সহায়ক খাবার হিসেবে খেতে বলেন।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পাকা টমেটো ফলপ্রসু ভূমিকা পালন করে। একটি নির্দিষ্ট বয়স অতিক্রান্ত হলে অনেকেই ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হন। ওষুধ ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় টমেটো রাখতে পারেন।
- দাঁত ও হাড় কে যথা সম্ভব সুগঠিত করার জন্য পাকা টমেটো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া, দাঁত ক্ষয়ে যাওয়া, দাঁতের গঠনগত ক্ষতি ইত্যাদি সমস্যা গুলো প্রতিরোধ করার জন্য নিয়মিত টমেটো খাওয়ার বিকল্প নেই।
- বর্তমানে কমন একটি সমস্যা হল উচ্চ রক্তচাপ। যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা সুরক্ষিত থাকার জন্য নিয়মিত টমেটো খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। টমেটোতে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে অত্যন্ত সহায়ক।
- কোষ্ঠকাঠিন্য একটি মারাত্মক সমস্যা। আর এই সমস্যাটি নিমিষেই দূর করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে টমেটো। কারণ টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। এই ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে আমাদের স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখে।
- ধূমপানের বাজে অভ্যাস অনেকের মাঝেই লক্ষ্য করা যায়। আর ধূমপানের ফলে ফুসফুস সহ সমগ্র শরীরের বহুবিধ ক্ষতি সাধিত হয়। টমেটোর অভ্যন্তরে থাকা কিউমেরিক ও ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ধূমপান জনিত ক্ষতি কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। মোদ্দা কথা যারা ধূমপানে জড়িত তাদের জন্য আদর্শ খাবার হচ্ছে টমেটো।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও ক্ষতিকর উপাদানগুলো দেহ থেকে বের করতে টমেটোতে থাকা খাদ্য উপাদান গুলো অত্যন্ত কার্যকরী। কেননা টমেটোতে অধিক পরিমাণে এন্টি ইনফ্লামেটরি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে।
- জ্বর-সর্দি-কাশি এর মত সাধারন সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় টমেটো সংযুক্ত করুন। টমেটোর একটি বিশেষ গুণ হল এটি ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে।
- টমেটো রক্তে কোলেস্টরেলের মাত্রা কমিয়ে দেহের ইমিউন সিস্টেমকে অনেক উন্নত করে। রক্তশূন্যতায় ভুগলে সেটি প্রতিরোধ করার জন্য টমেটো এক অনন্য খাবার হিসেবে বিবেচিত।
সুতরাং পাকা টমেটোর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা অনেকটাই ধারণা পেয়ে গেলেন। সঠিক নিয়মে টমেটো খেলে এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক মঙ্গলজনক হবে। এছাড়াও টমেটো খাওয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী, যেন এটি আমাদের স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি না করে।
প্রতিদিন কতটুকু টমেটো খাওয়া উচিত - প্রতিদিন টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
যে কোন খাবারই পরিমিত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সে হিসাবে প্রতিদিন একটি করে টমেটো খেলে কি হয়? এ ব্যাপারটি অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে। চলুন প্রতিদিন টমেটো খাওয়ার উপকারিতা কি কি সেটা এবার জানার চেষ্টা করি। প্রতিদিন অন্তত একটি করে টমেটো খেলে সেটি আমাদের দেহে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম সরবরাহ করবে। এতে করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন বাড়বে তেমনি হাড় ও দাঁত মজবুত হবে। এছাড়াও প্রতিদিন টমেটো খেলে মরণঘাতি ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
টমেটো খেলে কি ওজন কমে
টমেটো খেলে আমাদের দেহের উপর বিভিন্ন প্রভাব পড়ে। যাদের মেদ বেশি তারা চাইলে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় টমেটো রাখতে পারেন। এটি একদম প্রমাণিত যে টমেটো খেলে সেটি আমাদের শরীরে চর্বি কাটাতে সহায়তা করে। তাই অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা টমেটো খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে যারা ওজন বাড়িয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে চাচ্ছেন তাদের টমেটো যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। সুতরাং টমেটো খেলে ওজন কমে কিনা তা আপনারা বুঝতে পারলেন।গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
বন্ধুরা পাকা ও কাঁচা টমেটোর উপকারিতা আমরা পূর্ববর্তী অংশে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়াও কিন্তু প্রসূতি মায়ের জন্য দারুন ফল বয়ে আনতে পারে। গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি ও আয়রন অতীব জরুরী, আর ভিটামিন সি ও আয়রনের অন্যতম আধার এই টমেটো। গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অনাগত শিশুর পুষ্টি বৃদ্ধিতে টমেটোতে থাকা উপাদানগুলো অত্যন্ত কার্যকরী। গর্ভাবস্থায় টমেটো স্তনে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি, চর্মরোগ প্রতিরোধ এবং পুষ্টি সরবরাহ দারুন অবদান রাখে। তাই গর্ভাবস্থায় টমেটো এক আদর্শ খাবার।
টমেটো খাওয়ার অপকারিতা - টমেটো বেশি খেলে কি ক্ষতি হয়
বন্ধুরা আজকের পোস্টে আমরা মূলত কোন টমেটো খেলে ভালো উপকার পাবেন সে সম্পর্কে আলোচনা করেছি। তবে বেশি পরিমাণে টমেটো খেলে সেটি আপনার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাহলে টমেটো কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে? ব্যাপারটি মোটেও সেরকম নয়। বরং মাত্রাতিরিক্ত টমেটো খেলে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে।
- বেশি পরিমাণে টমেটো খাওয়ার ফলে অনেক সময় এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়।
- টমেটোতে রয়েছে ম্যালিক এসিড যা পাকস্থলীতে অম্লের মাত্রা বৃদ্ধি করে থাকে।
- কিডনি রোগীদের জন্য অবশ্যই টমেটো খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের থেকে পরামর্শ গ্রহণ করা ভালো।
- হৃদরোগের সমস্যা জর্জরিত রোগীদের জন্য টমেটো খেলে বিভিন্ন সাইড ইফেক্ট দেখা দিতে পারে।
- টমেটো খেলে কি গ্যাস হয় অনেকে এ আশঙ্কাটি করেন। হ্যাঁ বন্ধুরা নিয়ম না মেনে টমেটো অত্যাধিক পরিমাণ খেলে পেটে এসিডিটি ও গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
আশা করি পোষ্টের এই অংশ থেকে আপনারা টমেটো বেশি খাওয়া যাবে কি না সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা পেলেন। টমেটোর ক্ষতিকর দিকগুলো মাথায় রেখেই তাই টমেটো খেতে হবে। এজন্য বাজার থেকে কীটনাশক মুক্ত একদম সতেজ টমেটো সংগ্রহ করতে হবে। আর টমেটো খাওয়ার উপকারিতা জানার জন্য পোস্টটি শুরু থেকে পুনরায় পড়ে নিতে পারেন।
অনির্বাণ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url